ইসলাম

রোজা না রাখার শাস্তি ও দলিল

রোজা না রাখার শাস্তি আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘ইসলাম পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, সাক্ষ্যদাতা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল; সালাত কায়েম করা; যাকাত প্রদান; হজ করা এবং রমজানের রোজা রাখা।’ (সহীহ বুখারি : ৮)

যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভঙ্গ করে তাদের ইসলামের ভিত্তি ধ্বংসকারী হিসেবে গণ্য করা হয়

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বৈধ কারণ ব্যতীত একটি রোজাও ত্যাগ করে সে নিকৃষ্টতম গুনাহগার। এটাকে ধর্মের মৌলিক কর্তব্য লঙ্ঘন এবং ঈমান ও ইসলামের ভিত্তি ধ্বংসকারী হিসেবে গণ্য করা হয়। আর এর কারণে তার যে ক্ষতি হবে তা অনন্তকালেও পূরণ হবে না। পরে কাজা করলেও রমজানের রোজার ফজিলত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হবে।

হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বোঝা বা অসুস্থতা ছাড়াই রমজানের একটি রোজা ছেড়ে দেয়, সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে সারাজীবন রোজা রাখে, তবে ওই রোজার কোনো ক্ষতিপূরণ হবে না।
(জামে তিরমিযীঃ ৭২৩)

রোজা না রাখার শাস্তি নবীজীকে দেখানো হয়েছিল

আবূ উমামা বাহিলী (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, একবার আমি ঘুমিয়ে পড়ি। এমন সময় দুজন লোক এসে আমার অস্ত্র ধরে দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে গেল। সেখানে নিয়ে গিয়ে আমাকে বলল, পাহাড়ে চড়। আমি বললাম, আমি পারব না। তারা বলল, আমরা আপনার জন্য সহজ করে দিচ্ছি। তাদের আশ্বাস পেয়ে আমি উঠতে শুরু করে পাহাড়ের চূড়ায় চলে যাই। বিকট চিৎকার শোনা গেল। জিজ্ঞেস করলাম, কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে কিছু লোকের কাছে নিয়ে গেল যারা তাদের গোড়ালি দিয়ে ঝুলছিল। তাদের গাল ফেটে রক্ত ঝরছে। জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা বললেন, এরা সেই রোজাদার যারা রোজা শেষ করার আগেই ইফতার করত। (রোজা না রাখার শাস্তি)
(সহীহ ইবনে হিব্বান : ৭৪৯১)

রোযার কাজা ও ফিদিয়া

যারা অবহেলা বা অজ্ঞতার কারণে রমজানের রোজা না রাখার গুনাহের সাথে জড়িত তাদের জন্য ফক্বীহ আলেমদের উপদেশ হলো, যৌবনে উপনীত হওয়ার পর থেকে রমজানের যে সব রোজা বাদ পড়েছে তার জন্য তওবা করা এবং হিসাব-নিকাশ করা জরুরি। কাজা একটানা কাযা করা জরুরী নয়। বার্ধক্য হলে বা কোনো কারণে কাজা করতে না পারলে ফিদয়া দেওয়া হবে। রোজা রাখার সামর্থ্য না থাকলে প্রত্যেক রোজার জন্য একটি করে ফিতরাহ প্রদান করা হবে।
(ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া: 1/205, ফাতওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: 2/464)

রোজার কাযা ও ফিদয়া কখন?

ফিদিয়া ও কাযার শর্ত ভিন্ন। কোনো ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে না পারলে এবং পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত অনুযায়ী সুস্থ হওয়ার পর রোজার কাযা আদায় করতে হবে। সেই ব্যক্তির জন্য কোন মুক্তিপণ নেই। যদি কোনো অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে, অথবা কোনো বৃদ্ধ ব্যক্তির রোজা রাখার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে ফিদইয়া প্রদান করা হবে।
(ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৫৫)
ফিদিয়ার পরিমাণ হলো একজন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়ানো। কেউ নগদ অর্থও দিতে পারেন। প্রতিটি রোযার জন্য সর্বনিম্ন ফিদিয়ার পরিমাণ সাদাকাতুল ফিতরের সমান।
(আল ইনায়া : ২/২৭৩)

কাফফারা প্রদানের বিধান

যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের রোজা ভঙ্গ করে কোনো শরীয়াহ-সম্মত কারণ ছাড়াই খাওয়া-দাওয়া করে বা সহবাস করে তাহলে কাযা ও কাফফারা আদায় করতে হবে। খাওয়া এবং সহবাস ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করলে কাফফারা লাগে না, তবে কাযা করতে হবে।
(মাবসুতে সারাখসীঃ ৩/৭২)

রোজার কাফফারার জন্য টানা ৬০ দিন রোজা রাখা আবশ্যক। যদি টানা ৬০টি রোযার মাঝখানে একদিনও বাদ পড়ে, তাহলে শুরু থেকেই গণনা শুরু করতে হবে, আগেরগুলো বাদ যাবে।
(মাবসুতে সারাখসীঃ ৩/৮২)
অথবা ৬০ জন মিসকীনকে দুবেলা খাবার দিলেও কাফফারা হয়ে যাবে। একজন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একই রমজানের রোজা একাধিকবার ভঙ্গ করার জন্য একটি কাফফার যথেষ্ট হবে। অর্থাৎ, সমস্ত ভঙ্গের রোযার জন্য, 60 জন মিসকীনকে দিনে দু’বেলা খাওয়ানো হবে, অথবা প্রতি দরিদ্র ব্যক্তিকে একটি ফিতরাহ মাফ করা যেতে পারে।
(বাদায়ুস সানায়ীঃ ২/১০১, রদ্দুল মুহতারঃ ২/৪১৩)

রোজা রাখার সওয়াব

যারা ভক্তি সহকারে রোজা রাখে তাদের সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও নিষ্ঠার সঙ্গে রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
(সহীহ বুখারি: 1901)

হাদিসে কুদসীতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমি এর প্রতিদান দেব।’
(মুসলিম : ২৭৬০)

আরও পড়ুন>>রোজা রাখার উপকারিতা

Related posts
ইসলাম

কুরবানীর ইতিহাস ও তাৎপর্য কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী

কুরবানীর ইতিহাস ও তাৎপর্য ।কোরবানি…
Read more
ইসলাম

ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা এবং দাম্পত্য জীবনের গুরুত্ব

ইসলামিক জীবন ব্যবস্থা “দুনিয়ার…
Read more
ইসলাম

জান্নাত বাসী পাঁচটি গুন

জান্নাত বাসী পাঁচটি গুন রমজানের ১৪তম…
Read more
Newsletter
Become a Trendsetter
Sign up for Davenport’s Daily Digest and get the best of Davenport, tailored for you.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *