রোজা রাখার উপকারিতা আকাশ-বাতাসে রমজানের আগমন বার্তা। মুসলমানদের ঘরে ঘরে চলছে রমজানের প্রস্তুতি। পুরো এক মাস সিয়াম রাখার পর পালিত হবে ঈদুল ফিতর। রমজান মাসে মুসলমানরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সব ধরনের খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকে। সন্ধ্যায় মাগরিবের আজান শুনে রোজা ভাঙ্গে ।
সারা বিশ্বের মুসলমানরা সকল ধর্মীয় রীতি মেনে মাসটি পালন করে। ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণও রয়েছে। পুরো এক মাস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাসের ধর্মীয় তাৎপর্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোজা রাখার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে। এটি শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে। চলুন জেনে নিই রোজা রাখার উপকারিতা-
রোজা রাখার উপকারিতা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সুস্থ থাকতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোজা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অনেক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। রোজা রাখলে শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। যার কারণে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যারা ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিসে ভুগছেন তাদের উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোজা রাখা এবং সে অনুযায়ী খাবার খাওয়া।
প্রদাহ কমাতে কাজ করে
শরীর যখন বিভিন্ন সংক্রমণের সাথে লড়াই করে তখন প্রদাহ হয়। আবার অনেকের শরীরে প্রদাহের কারণও খুঁজে পাওয়া যায় না। যাদের হৃদরোগ, ক্যান্সার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি রোগ আছে তাদের প্রদাহের প্রবণতা বেশি। বিভিন্ন গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে যে নিয়মিত রোজা রাখলে প্রদাহের ঝুঁকি কমে।
রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ বিশ্বে মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ। এক্ষেত্রে সমস্যার মূল কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোজা কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি কমায়।
মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়
আমাদের বেশিরভাগ কাজ বা সিদ্ধান্ত আমাদের মস্তিষ্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আপনার মস্তিষ্কের শক্তি যত বাড়বে, আপনি ততই অনন্য হয়ে উঠবেন। আর এই কাজে রোজা আপনাকে সাহায্য করবে । রোজার মতো অভ্যাস মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এর পাশাপাশি রয়েছে কাঠামোগত পরিবর্তন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে
ওজন কমাতে নানা রকম চেষ্টা করেও ওজন কমে না অনেকের। রমজান মাসে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। পুরো এক মাস রোজা রাখলে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমবে। দ্রুত সুবিধা পাবেন। কারণ এই সময়ে প্রতিদিন রোজা রাখার কারণে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি দেখা দেবে। ফলস্বরূপ, চর্বি দ্রুত বার্ন হবে। ওজন কমবে। পবিত্র রমজান এভাবে শরীর ও মনে প্রশান্তি নিয়ে আসে।
খারাপ অভ্যাস এড়ানো যায়
রোজা শুধু একজন মানুষের পাকস্থলী বা হৃদপিণ্ডকে সচল রাখে না, অন্য অনেক রোগের জন্যও উপকারী; বিশেষ করে উপবাসের সময় ধূমপান ও মাদকদ্রব্য সেবন বন্ধ করলে ক্যান্সার, হার্ট ফেইলিউর, স্ট্রোকের মতো জটিল রোগের আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। অনেকে চাইলেও ধূমপান ছাড়তে পারেন না। রমজান তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। এই মাসে ধূমপানের মতো ক্ষতিকর ও খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করুন বা কমিয়ে দিন।
পরিপাকপ্রক্রিয়া কার্যকর হয়
উপবাস দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধা নিবারণ করে না, তবে ধীরে ধীরে ক্ষুধা নিবারণ করে। ফলে রমজানের শেষে ক্ষুধার মাত্রাও কমে যায়। খাদ্যনালীর পরিপাকতন্ত্র আরও কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে খাবার থেকে আরও পুষ্টি আহরণ করা যায়। তা ছাড়া রোজা রাখার কারণে পাকস্থলী আগের চেয়ে বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করে। পাচনতন্ত্র শক্তিশালী হয়। ইফতারে শরীর সহজেই পুষ্টি গ্রহণ করে। অ্যাডিপোনেক্টিন নামক একটি হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা মাংসপেশিকে খাদ্য থেকে আরও পুষ্টি শোষণ করতে সক্ষম করে।
আরো পড়ুন>>রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ